Pages

Thursday, September 29, 2011

 ধার করে চলছে রাষ্ট্রীয় মালিকানার চার ব্যাংক


ধার করে চলছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চার ব্যাংক। নাজুক পরিস্থিতিতে পড়েছে মুদ্রাবাজারের মূল ক্রেতা এখন সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক। অথচ কিছুদিন আগেও এই ব্যাংকগুলো ছিল মুদ্রাবাজারে মূল অর্থ জোগানদাতা।
আমানত সংগ্রহের চেয়ে ঋণ বেশি দিয়ে দেওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মুদ্রাবাজারের সূত্রগুলো জানাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ ব্যাংক চিঠি দিয়ে ব্যাংকগুলোর ভবিষ্যৎ-ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ) রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে সরকারের হস্তক্ষেপে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আইএমএফের একটি মিশন সরকারকে একটি প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চার বাণিজ্যিক ব্যাংক নগদ অর্থের চাপের মধ্যে রয়েছে। সরকারি সংস্থাগুলোকে ঋণ দিতে গিয়েই এই চাপ তৈরি হয়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ে সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজী বাহারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বিষয় দেখার দায়িত্ব হচ্ছে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি)। আমি অন্যদের মতো প্রতিদিন ব্যাংকে গিয়ে সুপার এমডি হয়ে বসে থাকি না। পর্ষদ সভায় যাই। তখন সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব এলে ক্ষেত্রবিশেষে আলোচনা হয়। কিন্তু, পর্ষদে নীতিনির্ধারণী বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।’
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সতর্ক করা চিঠি বাহারুল ইসলাম গতকাল বিকেলেই পেয়েছেন এবং এ বিষয়ে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মতামত দিতে চাননি। আর সোনালী ব্যাংকের এমডিকে ফোন করা হলে তিনি দেশে নেই বলে জানা যায়।
একদিকে সরকার নিজে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ করে চলছে। ফলে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রাপ্তিতে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অন্যদিকে আইএমএফ বলেছে, সরকারি সংস্থার ঋণ দিতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে নগদ অর্থের চাপ তৈরি হয়েছে। জানা গেছে, পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) জ্বালানি তেল আমদানিতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোকে অর্থ জোগান দিতে হয়।
তবে এই ব্যাংকগুলোর বর্তমান সমস্যা তাদের আমানতের তুলনায় ঋণ বেশি দেওয়ায় মূলত এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানা যায়।
ঋণ ও আমানত পরিস্থিতি: সূত্র জানায়, সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ শেষে সোনালী ব্যাংকের ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৫৩ শতাংশ কিন্তু আমানত সংগ্রহে প্রবৃদ্ধি মাত্র ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ। জনতা ব্যাংকের ঋণ প্রবৃদ্ধি ১২ দশমিক ২৩ ও আমানত ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ, অগ্রণী ব্যাংকের ঋণ প্রবৃদ্ধি ২৫ দশমিক ৬৭ ও আমানত ১৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং রূপালী ব্যাংকের ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ১৫ এবং আমানতের প্রবৃদ্ধি মাত্র ৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
কাজী বাহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এমডি আমানতে সুদহার বাড়ানোর প্রস্তাব এনেছিলেন। আমাকে তিনি বলেন, বেসরকারি ব্যাংকের আমানতের সুদ বেশি হওয়ায় আমানত উত্তোলন হয়ে যাচ্ছে। এটা নিয়ে কথা হয়েছে।’
ধার করে চলছে ব্যাংকগুলো: ৬ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সোনালী ব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে গড়ে প্রতিদিন ৪৮৬ কোটি, জনতা এক হাজার ২৪৬ কোটি, অগ্রণী এক হাজার ১৭৭ কোটি ও রূপালী ব্যাংক ৪৫৬ কোটি টাকা ধার করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শর্ত না মানা: রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর আর্থিক দুর্বলতা থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে এদের পৃথকভাবে সমঝোতা চুক্তি আছে। কিন্তু, প্রায়ই এই ব্যাংকগুলো সেই চুক্তির শর্ত মানে না। যেমন-চুক্তি অনুসারে এই ব্যাংকগুলোর ঋণের প্রবৃদ্ধির সীমা বেঁধে দেওয়া আছে। কিন্তু ইতিমধ্যেই অগ্রণী ও জনতা ব্যাংকের ঋণ প্রবৃদ্ধি গত বছরের তুলনায় ১৫ শতাংশের বেশি হয়ে গেছে।
খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি: মাঝখানে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও আবার তার অবনতি হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, গত ছয় মাসে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ প্রায় ৯৫ কোটি টাকা বেড়ে জুন শেষে হয়েছে প্রায় ছয় হাজার ৯১৯ কোটি টাকা বা ২৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ। জনতা ব্যাংকের এই সময়ে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা, হয়েছে এক হাজার ২০৮ কোটি টাকা বা বিতরণ করা ঋণের ৫ দশমিক ১০ শতাংশ। অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছয় মাসে ৩৫১ কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে দুই হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা বা ১৩ দশমিক ১৬ শতাংশ। তবে রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ এই সময়ে প্রায় ২৯০ কোটি টাকা কমেছে। কিন্তু, কোনো ব্যাংকেরই খেলাপি ঋণ আদায় পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয়।
এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জরুরি ভিত্তিতে একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে তা বাস্তবায়নের নির্দেশনা দিয়েছে ব্যাংকের চেয়ারম্যানদের। সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, অনিয়ম ও দুর্বলতা দূর করতে হবে। ঋণের প্রবৃদ্ধি যেন আমানতের প্রবৃদ্ধির চেয়ে বেশি না হয়, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে নিয়ম-কানুন যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে, যাতে খেলাপি ঋণ না বাড়ে।
News Source

No comments:

Post a Comment