চলতি মাসেই বহুল আলোচিত বুকবিল্ডিং পদ্ধতির সংশোধনী চূড়ান্ত হচ্ছে। সম্প্রতি এ আইনের চূড়ান্ত খসড়ার জনমত যাচাইয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
জনমত যাচাই ও প্রস্তাবিত খসড়ার বিভিন্ন দিক যাচাই-বাছাই শেষে চলতি মাসেই বুকবিল্ডিং পদ্ধতি সংশোধনে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) সূত্রে জানা গেছে।
আগামী ২৭শে সেপ্টেম্বর কমিশন সভায় প্রজ্ঞাপন জারির সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এসইসি সূত্রে জানা যায়, বুকবিল্ডিং পদ্ধতির সংশোধনী চূড়ান্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে ইতিমধ্যেই তিনবার বৈঠকে বসেছেন কমিশনের সদস্যরা।
বৈঠকে বুকবিল্ডিং পদ্ধতি সংশোধন বিষয়ক চূড়ান্ত খসড়ার বিভিন্ন দিক নিয়ে পর্যালোচনা হয়েছে। পাশাপাশি এ সংক্রান্ত জনমতকেও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সবকিছু পর্যালোচনা করেই আইনটি চূড়ান্ত করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এর আগে গত ৩রা সেপ্টেম্বর বুকবিল্ডিং পদ্ধতি সংশোধন বিষয়ক চূড়ান্ত খসড়ায় জনতম যাচাইয়ের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয় এসইসি।
বিধি অনুযায়ী পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিন থেকে পরবর্তি ১৫ দিন অর্থাৎ ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বুকবিল্ডিং পদ্ধতির সংশোধনী বিষয়ে জনমত যাচাই করা হয়। এরপরই এ আইনটি সংশোধন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসইসি’র একজন শীর্ষ কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
গত ১৭ই আগস্ট স্টেকহোল্ডররা বিরোধিতা সত্ত্বেও শেয়ারের প্রাথমিক নির্দেশক মূল্য (ইনডেকেটিভ প্রাইস) নির্ধারণে সর্বোচ্চ সীমা আরোপের শর্ত রেখেই আলোচিত বুকবিল্ডিং পদ্ধতি সংশোধন বিষয়ক চূড়ান্ত খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয় এসইসি।
তবে এ পদ্ধতিতে আইপিও অনুমোদনের ক্ষেত্রে কোম্পানির প্রসপেক্টাস পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য যে বিশেষ কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছিল তা প্রত্যাহার করে কমিশন।
বাজার বিশ্লেষকরা বলেছেন, শেষ পর্যন্ত এসইসির প্রস্তাব গ্রহণ করা হলে, আইপিওর মাধ্যমে কোন কোম্পানির শেয়ার অতিমূল্যায়িত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না এবং ভাল মৌলভিত্তির কোম্পানি তার শেয়ারের যৌক্তিক মূল্য পাবে। এর মাধ্যমে বুকবিল্ডিং পদ্ধতি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্কেতও অবসান হবে বলেও মনে করেন তারা।
এসইসির প্রস্তাব অনুযায়ী, এ পদ্ধতিতে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) মূল্য নির্ধারণের প্রথম ধাপে নির্দেশক মূল্য কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয়ের (ইপিএস) ১৫ গুণ এবং শেয়ারপ্রতি সম্পদ মূল্যের (এনএভি) তিনগুণের বেশি বা উভয়টির মধ্যে যেটি কম তার বেশি হতে পারবে না।
চলতি বছরের ১৭ই আগস্ট কমিশনের বৈঠক শেষে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসইসি’র মুখপাত্র সাইফুর রহমান জানান, খসড়া অনুমোদনের পর শিগগিরই বুকবিল্ডিং পদ্ধতি সংক্রান্ত খসড়া পত্রিকায় জনমত যাচাইয়ের জন্য প্রকাশ করা হবে।
জনমত যাচাইয়ের পর পাবলিক ইস্যু রুলস ২০০১ সালের এই সংশোধন অর্ন্তভুক্ত হবে। শেয়ারবাজারে বড় ধরনের বিপর্যয়ের প্রেক্ষাপটে গত ২০শে জানুয়ারি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে শেয়ারের অতি মূল্যায়নের বিষয়টি আলোচনায় আসে।
বৈঠকে বলা হয়, বুকবিল্ডিং পদ্ধতি ব্যবহার করে অনেক কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসার আগেই শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্য নির্ধারণ করছে। এর ফলে বাজার থেকে অতিরিক্ত অর্থ স্থানান্তরিত হয়ে যাচ্ছে।
বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে শেয়ার দর নির্ধারণ অতিমূল্যায়িত হয়ে পড়ছে- এমন অভিযোগের ফলে সরকারের নির্দেশে এসইসি গত ২০শে জানুয়ারি থেকে এ পদ্ধতিতে আইপিও অনুমোদন বন্ধ রেখেছে। পরে দেশীয় প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে এসইসি এ পদ্ধতি সংশোধনের জন্য নতুন একটি খসড়া বিধি তৈরি করেছে।
কমিশন আশা করছে, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে বুক বিল্ডিং পদ্ধতির চূড়ান্ত সংশোধন করা সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, জানুয়ারিতে বুকবিল্ডিং পদ্ধতি সাময়িক স্থগিত করার আগে অন্তত ৪৮টি কোম্পানি এ পদ্ধতিতে শেয়ার বিক্রি করে কয়েক হাজার কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ করতে প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। শেষ পর্যন্ত এ পদ্ধতির ত্রুটি সংশোধন করা হলে আগামী কয়েক মাসে একের পর এক নতুন কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পথ উন্মুক্ত হবে। এতে শেয়ারবাজাারে দীর্ঘদিনের অস্থিরতা কাটিয়ে নতুন করে প্রাণ সঞ্চার হবে বলেও আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
No comments:
Post a Comment