শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকে করমুক্ত ঘোষণা করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ব্রোকারেজ হাউসগুলোর উৎসে কর ১০০ টাকায় ১০ পয়সা থেকে কমিয়ে পাঁচ পয়সা করা হয়েছে। তালিকাভুক্ত কম্পানির শেয়ার, ডিবেঞ্চার, সিকিউরিটিজ বা মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের ওপর আয়কর রেয়াত দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য অর্থমন্ত্রীকে প্রধান করে একটি উচ্চপর্যায়ের উপদেষ্টা কমিটি গঠন করেছে সরকার। গতকাল সোমবার পৃথক পৃথক প্রজ্ঞাপনে এসব সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়।
পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার দাবিতে আমরণ অনশনসহ নানা কর্মসূচি চলার প্রেক্ষাপটে গত রবিবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠক করেন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন। এর পরদিনই এসব ঘোষণা আসে।
এদিকে সরকারি পদক্ষেপ শুধু আশ্বাসের মধ্যে না রেখে বাস্তবে রূপ দেওয়ার দাবিতে রবিবার থেকে অনশন ও বিক্ষোভ করছে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ। গতকালের ঘোষণার পরও তারা অনশন ভাঙেনি। পুলিশের বাধার মুখে কয়েক দফা স্থান পরিবর্তন করে তাদের কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ। আগের দিনের ১৮১ পয়েন্ট পতনের পর গতকাল সোমবার ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক ৩৬.৮৭ পয়েন্ট বেড়ে ৫৪২৩.৯১ পয়েন্টে স্থির হয়েছে।
গতকাল দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে বাজার পরিস্থিতি ও সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে বিস্তারিত জানান এসইসির চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে সরকার একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে এসইসির পক্ষ থেকে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করা হচ্ছে। পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল ও শক্তিশালী করতে তাঁরা একমত পোষণ করেন। কমিশনের পক্ষ থেকে যেসব প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে, তার সবই পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের ব্যবসায়িক ব্যয় হ্রাস এবং প্রণোদনা প্রদানের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর রেয়াত প্রদানের বিষয়ে ইতিমধ্যেই এনবিআরের সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সেসব বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে বলে জানান ড. খায়রুল হোসেন।
গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ওপর কর রেয়াত সুবিধা দেওয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ব্রোকারেজ কমিশনের ওপর কর হার ০.০৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ০.১০ শতাংশ করা হয়েছিল। বর্ধিত এই কর হ্রাস করে পুনরায় ০.০৫ শতাংশ করা হয়েছে। কর কমানোর পরও কোনো ব্রোকারেজ হাউস বিনিয়োগকারীদের ওপর আরোপিত কমিশন না কমালে এসইসির পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রেও আয়ের ওপর সব কর প্রত্যাহার করা হয়েছে।
শেয়ারবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে এসইসির চেয়ারম্যান বলেন, বাজেটে যেভাবে এই সুবিধা দেওয়া হয়েছিল, এখনো তা পুরোপুরি বহাল রয়েছে। এই নিয়ে নতুন করে কোনো কিছু করার প্রয়োজন নেই। শেয়ারবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগ করলে তার উৎস নিয়ে কেউ প্রশ্ন করবে না। এ নিয়ে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।
এসইসি চেয়ারম্যান বলেন, রবিবার রাতে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক হয়েছে। সেখানে এসইসি এ পর্যন্ত যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে এবং বাজারে তার কী ধরনের ফল হয়েছে, সে বিষয়ে মন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে। পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ত থাকায় তা সম্ভব হয়নি। তবে পুঁজিবাজারে গতিশীলতা আনতে সব রকম পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন।
শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। অবশ্যই এর ফল পাওয়া যাবে।
গত বুধবার এসইসির সঙ্গে এনবিআরের বৈঠক থেকে এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণের আশ্বাস দেওয়া হয়। এনবিআরের পক্ষ থেকে দেওয়া সেই আশ্বাসের বিষয়টি সেদিন সংবাদ সম্মেলন করে জানায় এসইসি। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা ওই আশ্বাসে বিশ্বাস স্থাপন করতে পারেনি। তাই তারা বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে তাদের বিক্ষোভ ও অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন। রবিবার আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন বিনিয়োগকারীরা। এই কর্মসূচির প্রতি একাত্ম প্রকাশ করেন বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। এরপর রবিবার রাতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এসইসি, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
উপদেষ্টা কমিটি গঠন : শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে একটি উচ্চপর্যায়ের উপদেষ্টা কমিটি গঠন করেছে সরকার। ছয় সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটির প্রধান হিসেবে রয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ ছাড়া পুঁজিবাজার, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিষয়ে অভিজ্ঞ ও আইনজ্ঞদেরও রাখা হয়েছে কমিটিতে। অস্থিতিশীল পুঁজিবাজারকে আরো দক্ষ, স্বচ্ছ, স্থিতিশীল করাসহ বিভিন্ন সময় এ কমিটি উপদেশ দেবে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে আহ্বায়ক করে গঠিত ছয় সদস্যের কমিটিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ সিদ্দিকী ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট আনিসুল হক রয়েছেন। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল পর্যায়ের একজন কর্মকর্তাও থাকছেন এ কমিটিতে। আর অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব (প্রবিধি, নীতি ও মূলধন মার্কেট) উপদেষ্টা কমিটির সদস্য-সচিব হিসেবে কাজ করবেন। এত দিন এ পদে দায়িত্ব পালন করছিলেন অমলেন্দু মুখার্জি। তবে সম্প্রতি তিনি অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত হয়েছেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, ওই পদে নতুন করে যিনি দায়িত্ব নেবেন, তিনিই উপদেষ্টা কমিটির সদস্য-সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপসচিব মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে 'উলি্লখিত উপদেষ্টা পরিষদ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট আইন-কানুন, বিধি-বিধানসহ প্রাসঙ্গিক সব বিষয়ে উপদেশ দেবে। এই উপদেষ্টা পরিষদ প্রয়োজনে অতিরিক্ত সদস্য যথাসময়ে কো-অপ্ট করতে পারবে।'
সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল পর্যায়ের একজন কর্মকর্তাকে মনোনয়নের জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারকে অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ইস্যু করা প্রতি চারটি শেয়ারের বিপরীতে তিনটিতে ৯০০ টাকা হারে এবং রূপালী ব্যাংকের দুটি শেয়ারের বিপরীতে একটিতে ৩০০ টাকা হারে প্রিমিয়াম দেওয়ার প্রস্তাব করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। উভয় প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম ছিল ১০০ টাকা করে। গতকাল অর্থ বিভাগের অনুমোদনের জন্য এ প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, অর্থ বিভাগের অনুমোদনের পর খুব শিগগির এ দুটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারহোল্ডারদের প্রিমিয়াম দেওয়া হবে।
গতকাল সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যানকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়েছে, এখন থেকে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সিকিউরিটি ইস্যুর ক্ষমতা কমিশনের হাতে ন্যস্ত করা হলো। কমিশনই এখন থেকে এ দায়িত্ব পালন করবে। দেশে মোট মার্চেন্ট ব্যাংকের সংখ্যা ৫০।
এনবিআরের প্রজ্ঞাপন : শেয়ারবাজার চাঙ্গা করার জন্য এ খাতের বিনিয়োগকে করমুক্ত ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গতকাল সোমবার সকাল ১০টার দিকে পৃথক তিনটি প্রজ্ঞাপন জারি করে তা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশনকে (এসইসি) জানিয়ে দিয়েছে এনবিআর।
প্রজ্ঞাপনগুলোতে শেয়ার, ডিবেঞ্চার, মিউচ্যুয়াল ফান্ড, বন্ড বা সিকিউরিটিজের লেনদেন মূল্যের ওপর উৎসে আয়কর কর্তনের হার কমিয়ে ০.০৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
আলাদা আরেকটি প্রজ্ঞাপনে স্টক এঙ্চেঞ্জে তালিকাভুক্ত কম্পানির শেয়ার, ডিবেঞ্চার, সিকিউরিটিজ বা মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের ওপর আয়কর রেয়াত দেওয়া হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪-এর ৪৪ ধারার ২ উপধারা অনুযায়ী কিছু শর্ত সাপেক্ষে এ সুযোগ দেওয়া হয়েছে। গত ১ জুলাই থেকে এটি কার্যকর ধরা হবে।
এ ছাড়া অন্য এক প্রজ্ঞাপনে মিউচ্যুয়াল ফান্ড ইস্যুকারী ব্যক্তির ওই ফান্ড থেকে অর্জিত আয়কে কর অব্যাহতি দিয়েছে এনবিআর।
রাজস্ব বোর্ডেও আয়কর অনুবিভাগ থেকে জারি করা তিনটি প্রজ্ঞাপনেই স্বাক্ষর করেছেন অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ মো. আমিনুল করিম।
পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার দাবিতে আমরণ অনশনসহ নানা কর্মসূচি চলার প্রেক্ষাপটে গত রবিবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠক করেন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন। এর পরদিনই এসব ঘোষণা আসে।
এদিকে সরকারি পদক্ষেপ শুধু আশ্বাসের মধ্যে না রেখে বাস্তবে রূপ দেওয়ার দাবিতে রবিবার থেকে অনশন ও বিক্ষোভ করছে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ। গতকালের ঘোষণার পরও তারা অনশন ভাঙেনি। পুলিশের বাধার মুখে কয়েক দফা স্থান পরিবর্তন করে তাদের কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ। আগের দিনের ১৮১ পয়েন্ট পতনের পর গতকাল সোমবার ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক ৩৬.৮৭ পয়েন্ট বেড়ে ৫৪২৩.৯১ পয়েন্টে স্থির হয়েছে।
গতকাল দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে বাজার পরিস্থিতি ও সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে বিস্তারিত জানান এসইসির চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে সরকার একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে এসইসির পক্ষ থেকে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করা হচ্ছে। পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল ও শক্তিশালী করতে তাঁরা একমত পোষণ করেন। কমিশনের পক্ষ থেকে যেসব প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে, তার সবই পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের ব্যবসায়িক ব্যয় হ্রাস এবং প্রণোদনা প্রদানের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর রেয়াত প্রদানের বিষয়ে ইতিমধ্যেই এনবিআরের সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সেসব বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে বলে জানান ড. খায়রুল হোসেন।
গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ওপর কর রেয়াত সুবিধা দেওয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ব্রোকারেজ কমিশনের ওপর কর হার ০.০৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ০.১০ শতাংশ করা হয়েছিল। বর্ধিত এই কর হ্রাস করে পুনরায় ০.০৫ শতাংশ করা হয়েছে। কর কমানোর পরও কোনো ব্রোকারেজ হাউস বিনিয়োগকারীদের ওপর আরোপিত কমিশন না কমালে এসইসির পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রেও আয়ের ওপর সব কর প্রত্যাহার করা হয়েছে।
শেয়ারবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে এসইসির চেয়ারম্যান বলেন, বাজেটে যেভাবে এই সুবিধা দেওয়া হয়েছিল, এখনো তা পুরোপুরি বহাল রয়েছে। এই নিয়ে নতুন করে কোনো কিছু করার প্রয়োজন নেই। শেয়ারবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগ করলে তার উৎস নিয়ে কেউ প্রশ্ন করবে না। এ নিয়ে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।
এসইসি চেয়ারম্যান বলেন, রবিবার রাতে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক হয়েছে। সেখানে এসইসি এ পর্যন্ত যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে এবং বাজারে তার কী ধরনের ফল হয়েছে, সে বিষয়ে মন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে। পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ত থাকায় তা সম্ভব হয়নি। তবে পুঁজিবাজারে গতিশীলতা আনতে সব রকম পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন।
শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। অবশ্যই এর ফল পাওয়া যাবে।
গত বুধবার এসইসির সঙ্গে এনবিআরের বৈঠক থেকে এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণের আশ্বাস দেওয়া হয়। এনবিআরের পক্ষ থেকে দেওয়া সেই আশ্বাসের বিষয়টি সেদিন সংবাদ সম্মেলন করে জানায় এসইসি। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা ওই আশ্বাসে বিশ্বাস স্থাপন করতে পারেনি। তাই তারা বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে তাদের বিক্ষোভ ও অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন। রবিবার আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন বিনিয়োগকারীরা। এই কর্মসূচির প্রতি একাত্ম প্রকাশ করেন বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। এরপর রবিবার রাতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এসইসি, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
উপদেষ্টা কমিটি গঠন : শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে একটি উচ্চপর্যায়ের উপদেষ্টা কমিটি গঠন করেছে সরকার। ছয় সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটির প্রধান হিসেবে রয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ ছাড়া পুঁজিবাজার, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিষয়ে অভিজ্ঞ ও আইনজ্ঞদেরও রাখা হয়েছে কমিটিতে। অস্থিতিশীল পুঁজিবাজারকে আরো দক্ষ, স্বচ্ছ, স্থিতিশীল করাসহ বিভিন্ন সময় এ কমিটি উপদেশ দেবে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে আহ্বায়ক করে গঠিত ছয় সদস্যের কমিটিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ সিদ্দিকী ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট আনিসুল হক রয়েছেন। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল পর্যায়ের একজন কর্মকর্তাও থাকছেন এ কমিটিতে। আর অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব (প্রবিধি, নীতি ও মূলধন মার্কেট) উপদেষ্টা কমিটির সদস্য-সচিব হিসেবে কাজ করবেন। এত দিন এ পদে দায়িত্ব পালন করছিলেন অমলেন্দু মুখার্জি। তবে সম্প্রতি তিনি অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত হয়েছেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, ওই পদে নতুন করে যিনি দায়িত্ব নেবেন, তিনিই উপদেষ্টা কমিটির সদস্য-সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপসচিব মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে 'উলি্লখিত উপদেষ্টা পরিষদ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট আইন-কানুন, বিধি-বিধানসহ প্রাসঙ্গিক সব বিষয়ে উপদেশ দেবে। এই উপদেষ্টা পরিষদ প্রয়োজনে অতিরিক্ত সদস্য যথাসময়ে কো-অপ্ট করতে পারবে।'
সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল পর্যায়ের একজন কর্মকর্তাকে মনোনয়নের জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারকে অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ইস্যু করা প্রতি চারটি শেয়ারের বিপরীতে তিনটিতে ৯০০ টাকা হারে এবং রূপালী ব্যাংকের দুটি শেয়ারের বিপরীতে একটিতে ৩০০ টাকা হারে প্রিমিয়াম দেওয়ার প্রস্তাব করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। উভয় প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম ছিল ১০০ টাকা করে। গতকাল অর্থ বিভাগের অনুমোদনের জন্য এ প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, অর্থ বিভাগের অনুমোদনের পর খুব শিগগির এ দুটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারহোল্ডারদের প্রিমিয়াম দেওয়া হবে।
গতকাল সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যানকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়েছে, এখন থেকে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সিকিউরিটি ইস্যুর ক্ষমতা কমিশনের হাতে ন্যস্ত করা হলো। কমিশনই এখন থেকে এ দায়িত্ব পালন করবে। দেশে মোট মার্চেন্ট ব্যাংকের সংখ্যা ৫০।
এনবিআরের প্রজ্ঞাপন : শেয়ারবাজার চাঙ্গা করার জন্য এ খাতের বিনিয়োগকে করমুক্ত ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গতকাল সোমবার সকাল ১০টার দিকে পৃথক তিনটি প্রজ্ঞাপন জারি করে তা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশনকে (এসইসি) জানিয়ে দিয়েছে এনবিআর।
প্রজ্ঞাপনগুলোতে শেয়ার, ডিবেঞ্চার, মিউচ্যুয়াল ফান্ড, বন্ড বা সিকিউরিটিজের লেনদেন মূল্যের ওপর উৎসে আয়কর কর্তনের হার কমিয়ে ০.০৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
আলাদা আরেকটি প্রজ্ঞাপনে স্টক এঙ্চেঞ্জে তালিকাভুক্ত কম্পানির শেয়ার, ডিবেঞ্চার, সিকিউরিটিজ বা মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের ওপর আয়কর রেয়াত দেওয়া হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪-এর ৪৪ ধারার ২ উপধারা অনুযায়ী কিছু শর্ত সাপেক্ষে এ সুযোগ দেওয়া হয়েছে। গত ১ জুলাই থেকে এটি কার্যকর ধরা হবে।
এ ছাড়া অন্য এক প্রজ্ঞাপনে মিউচ্যুয়াল ফান্ড ইস্যুকারী ব্যক্তির ওই ফান্ড থেকে অর্জিত আয়কে কর অব্যাহতি দিয়েছে এনবিআর।
রাজস্ব বোর্ডেও আয়কর অনুবিভাগ থেকে জারি করা তিনটি প্রজ্ঞাপনেই স্বাক্ষর করেছেন অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ মো. আমিনুল করিম।
No comments:
Post a Comment