Pages

Tuesday, October 4, 2011

বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে বাজারে আসার জন্য তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না পাইপলাইনে থাকা কোম্পানিগুলো

বুক বিল্ডিং পদ্ধতি চূড়ান্ত অনুমোদনের পর তালিকাভুক্তির জটিলতা কাটলেও এ পদ্ধতিতে বাজারে আসার জন্য তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না পাইপলাইনে থাকা কোম্পানিগুলো। তবে বুক বিল্ডিং পদ্ধতি কার্যকর হলে নতুন অনেক কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসার প্রক্রিয়া শুরু করবে বলে আশা করছেন মার্চেন্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
এদিকে চলতি সপ্তাহে এসইসি প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে বুক বিল্ডিং পদ্ধতির স্থগিতাদেশ তুলে নেবে বলে জানা গেছে। দীর্ঘদিন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর শেয়ারের প্রাথমিক মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে ২০১০ সালের মার্চে বুক বিল্ডিং পদ্ধতি কার্যকর করা হয়। কিন্তু ওই সময় বিধিমালার দুর্বলতার সুযোগে কিছু কোম্পানি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্য নির্ধারণ করে বলে অভিযোগ ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ বছরের ২০ জানুয়ারি এই পদ্ধতির কার্যকারিতা স্থগিত করে এসইসি। 
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাজারে শেয়ারের চাহিদা ও জোগানের (ডিমান্ড অ্যান্ড সাপ্লাই) মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের লক্ষ্যে নতুন নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্তির পরিকল্পনা করছে এসইসি। প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে শেয়ার সরবরাহের ক্ষেত্রে যাতে দীর্ঘ বিরতি না পড়ে সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। আবার এক সঙ্গে অনেক কোম্পানি আসার ফলে বাজারে যাতে অর্থ সংকট তৈরি না হয় সে বিষয়টিও বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। তবে এসইসিতে আবেদন করার পর উদ্যোক্তারা যাতে অযথা সময়ক্ষেপণ বা হয়রানির শিকার না হন সেদিকেও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, বুক বিল্ডিং পদ্ধতি কার্যকর হওয়ার পর এই পদ্ধতিতে জমা পড়া আবেদনগুলো পর্যালোচনা করা হবে। স্থগিতাদেশের আগে এসইসিতে এ ধরনের ৪টি আবেদন জমা ছিল। এর মধ্যে ২০১০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত অনুমোদন পেলেও আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় সেই সময় বাজারে আসতে পারেনি অ্যালায়েন্স লিমিটেড।
অন্যদিকে ৩ কোটি শেয়ার ছেড়ে শেয়ারবাজার থেকে ৫৫৫ কোটি টাকার সংগ্রহের জন্য গত ১৩ জানুয়ারি ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টসের আইপিও অনুমোদন করে এসইসি। তবে এর পরপরই বুক বিল্ডিং পদ্ধতি স্থগিত হয়ে যাওয়ায় আইপিও প্রক্রিয়া শেষ করতে পারেনি কোম্পানিটি। এ কোম্পানির শেয়ারের নির্ধারিত মূল্য নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি কোম্পানিটি বুক বিল্ডিংয়ের পরিবর্তে নির্ধারিত মূল্যে আইপিও অনুমোদনের জন্য এসইসিতে আবেদন করেছে।
এ ছাড়া বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে নাভানা রিয়েল এস্টেট এবং কেয়া কটন মিলস লিমিটেডের আইপিও আবেদন এসইসিতে জমা আছে। এর মধ্যে নাভানা রিয়েল এস্টেট ৩ কোটি শেয়ার ছেড়ে ৩৭২ কোটি এবং কেয়া কটন ৫ কোটি শেয়ার ছেড়ে ২৪৮ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে চেয়েছিল। তবে আগের নির্ধারিত দরে এই দুই কোম্পানির আইপিও অনুমোদন করবে না এসইসি। বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে বাজারে আসতে হলে কোম্পানিগুলোকে নতুন বিধি অনুযায়ী রোড শো আয়োজন করে নির্দেশক মূল্য নির্ধারণের নির্দেশনা দেয়া হবে বলে এসইসি সূত্র জানিয়েছে।
জানা গেছে, গত জানুয়ারি পর্যন্ত বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে শেয়ারের মূল্য নির্ধারণের প্রাথমিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিল বেশকিছু কোম্পানি। এর মধ্যে জিএমজি এয়ারলাইন্স এ বছরের ১২ জানুয়ারি রোড শো আয়োজন করে। কোম্পানিটি মোট ৬ কোটি শেয়ার ছাড়ার প্রস্তুতি নিয়েছিল। তবে আর্থিক পরিস্থিতি ভালো না থাকায় কোম্পানিটি আপাতত শেয়ারবাজারে আসছে না বলে ২৭ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানিয়েছে। এর আগে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে শেয়ারবাজারে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেছিল গোল্ডেন হারভেস্ট, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেড, ফারইস্ট নিটিং অ্যান্ড ডায়িং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, আনন্দ শিপইয়ার্ড লিমিটেড, অরিয়ন ফার্মা লিমিটেড, পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এবং সামিট শিপিং লিমিটেড। এর মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড এরই মধ্যে নির্ধারিত মূল্য পদ্ধতিতে বাজারে আসার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। কোম্পানিটি ৩ কোটি ১০ লাখ শেয়ার ছাড়বে। এ কোম্পানির ইস্যু ব্যবস্থাপক আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড।
গোল্ডেন হারভেস্ট ৩ কোটি শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের জন্য ব্যানকো ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডকে ইস্যু ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব দিয়েছিল। ফারইস্ট নিটিং অ্যান্ড ডায়িং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ৩ কোটি শেয়ার ছাড়ার জন্য গত ১৬ জানুয়ারি রোড শো করে। এই কোম্পানির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে আইডিএলসি ফিন্যান্স লিমিটেড। জাহাজ নির্মাণ শিল্পের প্রথম কোম্পানি হিসেবে শেয়ারবাজারে আসার সিদ্ধান্ত নেয় আনন্দ শিপইয়ার্ড লিমিটেড। বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে মূল্য নির্ধারণের পর কোম্পানিটির মোট ৩ কোটি শেয়ার ছাড়ার কথা ছিল। আনন্দ শিপইয়ার্ড লিমিটেডের ইস্যু ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে রয়েছে প্রাইম ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। অরিয়ন ফার্মা লিমিটেড ৪ কোটি এবং পিএচপি ফ্লোট গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ৩ কোটি শেয়ার ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এর মধ্যে অরিয়ন ফার্মা আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডকে ইস্যু ব্যবস্থাপক নিযুক্ত করে। আর পিএচপির ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করছে অ্যালায়েন্স ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেড। সামিট গ্রুপের প্রতিষ্ঠান সামিট শিপিং লিমিটেড ৩ কোটি শেয়ার ছাড়ার জন্য ব্যানকো ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডকে ইস্যু ব্যবস্থাপক নিয়োগ করে। এ ছাড়া বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমস লিমিটেড (বিবিএস) নামে একটি কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসার জন্য জনতা ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডকে ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দিয়েছিল।
জানা গেছে, বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে বাজারে আসতে হলে প্রতিটি কোম্পানিকেই পুরো প্রক্রিয়া নতুন করে শুরু করতে হবে। এরই মধ্যে কোনো কোনো কোম্পানি এ পদ্ধতিতে বাজারে আসার সিদ্ধান্ত থেকে সরে গেছে। এমনকি দু-একটি কোম্পানি বর্তমান পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারে আসার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে বলে বিভিন্ন মার্চেন্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।


News Source


No comments:

Post a Comment